চারদিকে ঝোপঝাড়, কাঁটাতারের বেড়া; মাঝমাঠে একটি বাংলো। শহর থেকে বিদ্যুতের লাইনও গেছে ওই বাংলোতে। প্রায় ১২ বছর আগে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের মাঠের মাঝে বাংলোটি নির্মাণ করেন আক্তারুজ্জামান শাহীন।
শাহীন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি লাল পতাকার প্রধান টুটুল ডাক্তারের আপন চাচাতো ভাই। বেশকিছুদিন আগে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন এই টুটুল ডাক্তার।
শাহীন মাঝেমধ্যে এসে থাকতেন এই বাংলোতে। নির্জন এলাকার এই বাংলোয় শাহীন তার ব্যবসায়িক পার্টনার ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মিটিংও করতেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রহস্যঘেরা শাহীনের এই বাংলোটি। মাঠের মাঝখানে একটি বাংলো। বাংলোর চারপাশে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। প্রবেশ করার একটি মাত্র রাস্তা। মূল গেইটে তালা ঝুলছে, তাই ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি।
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বাংলোটিতে আর কেউ নেই। বাংলোটির ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় লোকজন ও শাহীনের ভাই কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে।
এলাঙ্গী গ্রামের আব্দুস সাত্তার বলেন, দীর্ঘ ১০/১২ বছর আগে আক্তারুজ্জামান শাহীন এই বাংলোটি নির্মাণ করেন। এখানে কী হয় আমরা জানি না। মাঝেমধ্যে দেখি গাড়িতে করে লোকজন আসা যাওয়া করে। গাড়ির মধ্যে কারা থাকে তাও বলতে পারব না।
গ্রামের লোকমান হোসেন ও লিয়াকত আলীও বলেন একই কথা, বাইরে থেকে অনেক সময় রাতে ঢোলের আওয়াজ শোনা যায়। তারা ওখানে মিটিং করে। বাংলোর ভেতরে কাউকে যেতে দেয় না। ফলে বেশি কিছু আমার বলতে পারব না।
গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, শাহীন প্রায়ই এই বাংলোতে এসে থাকেন। তার সঙ্গে লোকজনও থাকেন। ২৭ বিঘি জমির ওপর করা হয়েছে বাংলোটি।
গ্রামের আরিফ হোসেন বলেন, মাঠের মাঝে এইখানে ইটের ভাটা ছিল। ভাটা তুলে দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বাংলো করেছেন শাহীন।
শাহীনের ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম বলেন, শাহীন আমার ছোট ভাই। সে আমেরিকা থেকে বাড়ি আসে মাঝে মাঝে। আমার পৌর নির্বাচনের সময় এসে বেশ কিছুদিন ছিল। নির্বাচন শেষে আবার চলে যায়। গত রমজানের আগে এসেছিল এখানে। এসে সে তার বাংলোতেই থাকে, চলে যাওয়ার আগে বাড়ি এসে একবার দেখা করে যায়।
এমপি আনারের সঙ্গে শহীনের কতদিনের বন্ধুত্ব- জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাহীন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। লেখাপড়ার চলাকালে তাদের বন্ধুত্ব ছিল না। এখন আমেরিকার নাগরিক। আমেরিকা চলে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সময় থেকে বছর দশেক হবে তাদের বন্ধুত্ব হয়েছে।
শাহীন কী ব্যবসা করত আমি জানি না। তবে শাহীনের এই বাংলোতে সুইমিং পুল, ক্রিকেট, গলফসহ জিমের ব্যবস্থা আছে। তাদের নিজস্ব বাবুর্চিও আছে।
বাংলোয় কারা মিটিং সিটিং করেন তা তিনি জানেন না জানিয়ে বলেন, শাহীন এই বাংলো ছাড়াও আমেরিকা থেকে এসে ঢাকার গুলশানের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে। সে বর্তমানে বসুন্ধরায় নতুন বাড়ি করছে।
স্থানীয়রা জানান, শাহীন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি লাল পতাকার প্রধান টুটুল ডাক্তারের আপন চাচাতো ভাই। টুটুল ডাক্তার বেশ কিছুদিন আগে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। তার (শাহীনের) অবৈধ ব্যবসা আছে। ওই ব্যবসার কারণে এমপি আনারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল।
http://dlvr.it/T7Hp9T
0 Comments