কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, ঈদুল আজহা, গ্রীষ্মকালীন বন্ধসহ মোট ৫৩ দিনের বন্ধ শেষে অবশেষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছেন রোববার।
৫৩ দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্দেশে তিন দফায় ১৪ দিন ক্লাস নেননি শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি রোববার সকালে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী।
আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, পূর্ব নির্ধারিত ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে ২৩ জুন থেকে ক্লাস শুরু হবে কুবিতে। এ ছাড়া গত ৯৫ তম সিন্ডিকেট সভায়ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কুবি শিক্ষক সমিতি ক্লাসে ফেরার ব্যাপারে ঘোষণা দেন, তবে সেই সঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টার (দুপুর ১২টা থেকে ২টা ) অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণাও রয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এ ছাড়া শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য ২০ জুলাই পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আমরা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে আগামীকাল থেকে সশরীরে ক্লাস নেব। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে অনলাইনে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। এ ছাড়া আমাদের কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে।
দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরাও, তবে সেইসঙ্গে আছে সেশন জটের চাপও। এ বিষয় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া সাইমুম বলেন, সুন্দর ক্যাম্পাসটা এমন বন্ধ থাকুক তা চাই না। দীর্ঘ বন্ধের কারণে আমরা পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের প্রত্যাশা শিক্ষকরা আমাদের আর পিছিয়ে রাখবেন না।
ছয় মাসের যে সেমিস্টার তা আশা করি তারা ৪ মাসের মধ্যে শেষ করে দেবেন। এছাড়া গত দুই মাস যে জটিলতার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল আশা করি সামনের দিনগুলোতে আমাদের আর এই বেগ পোহাতে হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বজায় থাকুক সেটাই আমার চাওয়া। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য শিক্ষকরা যত্নশীল হবেন বলে আশা করি। এ ছাড়া শিক্ষকদের দাবিগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব শীঘ্রই সব দাবি বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তাদের সাত দফা দাবি আদায়ে গত ১৩ ও ১৪ মার্চ প্রথম দফায় ক্লাস বর্জন করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ১৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে। ঈদুল ফিতরের বন্ধ শেষে তৃতীয় দফায় ২১ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। সর্বশেষ ২৯ এপ্রিল শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি।
উদ্ভূত পরিস্থিতি সহনীয় করতে ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৯৩ তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই ঘোষণা পাল্টে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেয়া গত ৫ জুন অনুষ্ঠিত ৯৫ তম সিন্ডিকেটে। সেই মোতাবেক ৬ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম চলে, তবে পূর্ব নির্ধারিত ছুটি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন বন্ধ পায়।
সর্বশেষ গত ২১ জুন ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতিও।
http://dlvr.it/T8fBYl
0 Comments