সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাব প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, যা এ অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক শূন্য ১ ও ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা ওই অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক শূন্য ৩ ও ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। পরে তা নামিয়ে আনা হয় ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে। কিন্তু আলোচিত অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের একটিও এ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি। যদিও সবশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে আগের অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্যও সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির দুর্দশা থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না বাংলাদেশেরও। তাই প্রাথমিক হিসাবে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার ধারণা দেয়া হলেও চূড়ান্ত হিসাবে তা ছয় শতাংশের নিচে নেমে যায়।
বিবিএস জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা এ অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ, যা ওই অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা এ অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সেবাখাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এছাড়া সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্পখাতে ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। এ অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে খাতটিতে যথাক্রমে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নিয়মিতভাবে জিডিপি প্রাক্কলন করে আসছে। প্রথমে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রাক্কলনের কার্যক্রম গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বের অন্য দেশের মতো `উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রান্তিকের জিডিপি প্রাক্কলন করে বিবিএস। তবে বার্ষিক জিডিপি `উৎপাদন ও ব্যয় পদ্ধতিতে প্রাক্কলন ও প্রকাশ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
সরকার আগে অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রাথমিক হিসাব এবং কয়েক মাস পর চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করত। তাতে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত না বলে অভিযোগ ছিল অর্থনীতিবিদদের। পরে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত মানতে গত অর্থবছর থেকে প্রতি তিন মাসে একবার (প্রান্তিক ভিত্তিক) জিডিপির হিসাব প্রকাশ শুরু করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
http://dlvr.it/T9MwSv
0 Comments