নওগাঁর পত্নীতলায় অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ভুল চিকিৎসার সংবাদ প্রকাশ করায় দুই সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের মালিক, চিকিৎসক ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে সাংবাদিকতা না করার প্রতিশ্রুতি লিখে নিয়েছে। এমনকি এক সাংবাদিকের গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছে।
নির্যাতনের শিকার দুই সাংবাদিক হলেন দৈনিক জয়পুরহাট বার্তার প্রতিনিধি মাহমুদুন নবী ও দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম।
মাহমুদুন নবী বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর রবিউল ইসলাম নিজ বাড়িতেই আছেন।
শনিবার রাতে তাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে পত্নীতলা সিটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।
ঘটনার শিকার মাহমুদুন নবী জানান, শনিবার বিকেলে তিনি নজিপুর বাজারে সিটি ক্লিনিকের সামনে একটি স্টলে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় সিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার দেওয়ান সবুর হোসেন তাকে জোর করে ক্লিনিকের ভেতরে ধরে নিয়ে যান এবং অতর্কিত মারধর শুরু করেন। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে কয়েক দফায় মারধর করা হয়।
এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী কায়দায় মেরে ফেলার হুমকির মুখে সাংবাদিকতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাহমুদুন নবীর কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন হামলাকারীরা।
এছাড়া ফেসবুকে লাইভে সাংবাদিকতা না করার ঘোষণা এবং গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখেন তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এসে উদ্ধার করে তাকে থানায় নিয়ে যান।
সাংবাদিক মাহমুদুন নবী বলেন, অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক ও ভুল চিকিৎসার সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তাররা চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। এখন তারা মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে একই দিন রাত ১০টার দিকে দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি রবিউল ইসলামকে বাড়ির সামনে থেকে মোটর সাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সিটি ক্লিনিকে। সেখানে একটি ঘরে আটক করে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
রবিউল জানান, নির্যাতনের পর জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে ক্লিনিক মালিকদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনায় চিকিৎসক ও ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক মালিক পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে।
সিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ দাবি করেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের দ্বন্দ্ব হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত নয়।
চিকিৎসক দেওয়ান সবুর হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক মালিক পক্ষের লোকজন সাংবাদিকদের মারধর করেছে।
এ বিষয়ে পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিক মাহমুদুন নবী ও রবিউল ইসলামকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছিলো। তবে তারা এখনও কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
http://dlvr.it/TCzTh0
0 Comments