বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্বপ্নের বৈষম্যমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত।
রোববার রাজধানীতে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।
সভায় শহীদ ফারহানুল ইসলামের পিতা বলেন, আমার একমাত্র ছেলে ফারহান ফাইয়াজ পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি- যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের যেন দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়। আর যেন কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা না হয়।
কোরআনের আলোকে সংবিধান করা দরকার। ৭২-এর সংবিধান কেটে-ছেঁটে নিজের মতো করা হয়েছে। আবার যদি সেরকম সংবিধান থাকে, তাহলে আমাদের সন্তানদের ত্যাগ বৃথা যাবে।
শহীদ আসাদের সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে কোলে নিয়ে তার স্ত্রী বলেন, আমার সন্তানের মুখ আমার স্বামী দেখে যেতে পারেননি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবে শহীদ পরিবারের সদস্য ও ২০২৪ সালের শহীদ পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
ডা. শফিক বলেন, ২০০৬ সালের মাস্টার মাইন্ডদের তাণ্ডবে এই দেশ পথ হারিয়েছিল। মানুষরূপী বর্বর পশুদের জন্য সেদিনের হত্যাকাণ্ড ছিল স্বাভাবিক। তরুণ ও পথহারা জাতি ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লড়াই করে জাতিকে মুক্ত করেছে। এতে বহু পবিত্র জীবন ঝরে গেছে।
আহত ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি আপনাদের। শহীদদের জাতীয় বীর মনে করি।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতিকে জানাতে হবে।
জামায়াত আমির বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদেরকে চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, গতকাল (শনিবার) আমি বগুড়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে অন্তত ৫০ জন কালো চশমা পরা ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন- আমরা দুনিয়ার আলো দেখতে পারি না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বলেছিল ক্ষমতা ছাড়ার পর পাঁচ লাখ আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হবে। অভ্যুত্থানের পর ৫০০ কিংবা পাঁচজনকেও হত্যা করা হয়নি।
তারা দুর্নীতি করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পৃথিবীতে সব দেশেই বাংলাদেশিরা আছেন। যেখানেই যান আপনাদের ধরে ফেরত পাঠাবেন তারা। যেখানেই যাবেন সেখানেই ধরা হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস খুন ও ধর্ষণের ইতিহাস। গণতন্ত্র নস্যাৎ করার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের। ভূখণ্ড ত্যাগ করার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের। লাশের ওপর নৃত্য করার ঐতিহ্য ছাত্রলীগের।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এটি জনতার দাবি। গণহত্যা করার পর আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা সেটি জনগণের আদালতে ফয়সালা হবে। জনগণ ও আদালত সিদ্ধান্ত নেবে গণহত্যাকারী দল রাজনীতি করতে পারবে কি না। এ বিষয়ে জনগণ, আইন ও আদালত বিচার করুক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ বলেন, হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাকশালী আওয়ামী লীগ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের হত্যা করেছে। হাসিনার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে নির্দোষ ব্যক্তিদের হত্যা করার বিচার এদেশে হতে হবে। শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা করে জামায়াত নজিরবিহীন ভূমিকা রেখেছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম খান মিলন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নূরুল ইসলাম বুলবুল, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজার রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ, ১২ দলীয় জোটের আহ্বায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপি সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল।
http://dlvr.it/TFn8rB
0 Comments