Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

শিপইয়ার্ড থেকে উধাও ৭ কোটি টাকার জাহাজ

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের মালিকানাধীন শিপইয়ার্ড থেকে মেরামতের জন্য আনা একটি পুরাতন ওয়েল ট্যাঙ্কার উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় জাহাজটির মালিক পক্ষ ও শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ পরস্পরকে দায়ী করছে। থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে উভয় পক্ষ, বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের নভেম্বরে স্ক্রাব হিসেবে সাতটি জাহাজ মেসার্স মাল্টিপল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
সেখান থেকে টি টেকনাফ নামে পুরাতন একটি অয়েল ট্যাঙ্কার মেরামতের উদ্দেশে প্রায় এক বছর আগে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর এলাকার থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ডে নিয়ে আসেন মিলন হাজী, আলাউদ্দিন ও রফিক নামে তিন ব্যবসায়ী।
জাহাজটির মেরামত এবং প্রায় এক বছরের বাথিং খরচ বাবদ ৩০ লাখ টাকা বিল আসে। পাওনা টাকা দিতে একাধিকবার তাগাদা দিলেও তারা তা দিতে টালবাহানা শুরু করে। এর মধ্যে গত ১৯ মে সকাল থেকে জাহাজটি শিপইয়ার্ড এলাকায় দেখতে না পেয়ে বিষয়টি জাহাজটির মালিক পক্ষকে জানায় শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে দুই পক্ষ।
থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোজাম্মেল হক বলেন, জাহাজটি মেরামতের পরে আমাদের শিপইয়ার্ডের এক পাশে মেঘনা নদীতে নোঙর করে রাখা ছিল। মেরামত এবং বার্থিং চার্জ বাবদ ৩০ লাখ টাকা বিল আসে। আমরা বিল পরিশোধের জন্য একাধিক বার নোটিশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে গত ১৯ মে সকাল থেকে আমরা জাহাজটি শিপইয়ার্ড এলাকায় না দেখতে পেয়ে জাহাজটির মালিকপক্ষকে জানাই।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা পাওনা টাকা পরিশোধ না করার জন্য পরিকল্পিতভাবে তারাই জাহাজটি সরিয়ে ফেলেছে। ৮/৯ দিন চারদিকে খোঁজাখুঁজি করে আমরা জাহাজটির হদিস না পেয়ে ২৯ মে থানায় লিখিত অভিযোগ করি।
মেসার্স মাল্টিপল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রতিনিধি মহিউদ্দিন বলেন, শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ দুইবার আমাদের কাছে বিল পাঠায়। আমরা বিল পেয়ে তা পরিশোধ করি। গত ২৯ মে তারিখে আমাদের কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি জাহাজটি নিয়ে আসার জন্য শিপইয়ার্ডে গিয়ে দেখেন সেখানে জাহাজ নেই। আমাদের ধারণা জাহাজটি তারা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে অথবা কেটে বিক্রি করে ফেলেছে। জাহাজটির বর্তমান বাজারমূল্য ৭ কোটি টাকারও বেশি। এ বিষয়ে আমরা গত ৩০ মে গজারিয়া থানাতে লিখিত অভিযোগ করেছি।
গজারিয়া থানার ওসি মো. রাজিব খান বলেন, উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানে। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।
এদিকে জাহাজের নিবন্ধন দেয়া প্রতিষ্ঠান নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নৌ বাণিজ্য দপ্তরের সবশেষ তালিকা ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত জাহাজটির মালিকানা দেখানো হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন।
ক্রাব হিসেবে বেশ কয়েক বছর আগে বিক্রি করা একটি জাহাজের মালিকানা এখনো কেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে এটা জানতে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার এবং রেজিস্টার অব বাংলাদেশ শিপস ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা নৌযানের নিবন্ধন দিয়ে থাকি। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী ট্যাঙ্কার টেকনাফের মালিকানা এখনো বিআইডব্লিউটিসির। প্রতিষ্ঠানটি যদি কোনো জাহাজ স্ক্রাব হিসেবে বিক্রি করতে চায়, তাহলে আগে আমাদের কাছ থেকে তাদের প্রত্যয়ন নিতে হবে এবং জাহাজটি স্ক্রাব হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে কি না এ মর্মে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
সাব্বির মাহমুদ আরও বলেন, এ নৌযানটির ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি আমাদের কাছ থেকে কোনো প্রত্যয়ন নেয়নি এবং স্ক্রাব হিসেবে বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। তারা কেন এমনটি করল আমি খবর নিয়ে দেখছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম মতিউর রহমানের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা শিপবিল্ডিংয়ের তথ্য বলছে, ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট জাহাজটি নির্মাণ করা হয় ১৯৪৪ সালে। সেখানে জাহাজটির বর্তমান অবস্থা পরিত্যক্ত অথবা হারিয়ে যাওয়া দেখানো হয়ে। তবে নৌ বাণিজ্য দপ্তরে তালিকায় জাহাজটির নির্মাণ সাল ১৯৪৫ দেখানো হয়েছে।


http://dlvr.it/T7kj6l

Post a Comment

0 Comments