Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বনবিভাগের জায়গায় ‘গ্রাম’, বনকর্তার পকেটে মাসে ২০ লাখ

কক্সবাজারের টেকনাফ শীলখালী বন বিভাগের জায়গাটির নামই পরিবর্তন হয়ে গেছে। মানুষ এখন এলাকাটিকে চেনে বনকর্তা শাফিউলের সাম্রাজ্য হিসেবে। বন বিভাগের প্রায় ৮০ বিঘা জমি দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে দুশতাধিক ঘরবাড়ি।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারি জায়গায় এই গ্রাম গড়ে তুলেছে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। আর পুরো কাজটিরই নাটের গুরু বন কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম, যিনি নিজেকে এক সচিবের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ শীলখালী রেঞ্জ বিটে প্রথম দিকে বাগান গড়ে তুললেও পরে সেগুলো কৌশলে বিনষ্ট করে জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেন বনকর্তা শাফিউল। আর সে সুবাদে বনের ওই জমি এখন হয়ে গেছে এই রেঞ্জ কর্মকর্তার।

কক্সবাজারের টেকনাফ শীলখালী বনবিটের রেঞ্জ কমকর্তা শাফিউল ইসলাম। ছবি: নিউজবাংলা

সব মিলিয়ে দুশতাধিক ঘর তোলা হয়েছে বন বিভাগের ওই জমিতে। আর সেসব ঘরের বাসিন্দাদের কাছ আদায় করা হচ্ছে মাসোহারা। ভাড়ার নামে এভাবে শফিউল মাসে ২০ লাখ টাকা আদায় করে আসছেন।
বনবিভাগের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব বাড়ি থেকে মাসিক ভাড়ার নামে চাঁদা আদায়ের জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউলের রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধিও এই দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করলে উল্টো তাকে হুমকি দেয়া হয়। দেখানো হয় মামলার ভয়।
তবে এবার শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার পর ভুক্তভোগী সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার টেকনাফের রাজার ছড়া, হাবির ছড়া, কচ্ছপিয়া, করাচি পাড়া, বড় ডেইল, মাথা ভাঙ্গা, জাহাজ পুরা ও শীলখালী এলাকায় বন বিভাগের গাছ কেটে ফেলে ঘর তৈরির জন্য বনবিভাগ থেকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিছু অংশে গাছপালা রোপণও করা হয়েছিল। তবে সেখানকার প্রায় ৮০ বিঘা জমির মধ্যে এখন আর তেমন গাছ নেই। নির্মাণ করা হয়েছে ঘর-বাড়ি। আর এসব ঘর-বাড়ির ভাড়াটেদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
ভাড়াটেদের একজন নুর উদ্দিন বলেন, বনের লোকজন আমাদেরকে এ জায়গা বিক্রি করছে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে এবং মাসে ১০ হাজার টাকা করে নেয়। আর টাকা দিতে দেরি হলে ঘর-বাড়ি ভেঙে দেয়ার হুমকি দেয়।
বনবিভাগের জায়গায় এমন দুই শতাধিক বাড়ি আছে। এসব ঘর থেকে আদায় করা ভাড়ার একটা অংশ প্রতি মাসে সেখানে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে একপর্যায়ে চাপে পড়ে বন বিভাগ নিজেদের দায় এড়াতে মামলা করেছে।
এ বিষয়ে বাহারছড়া ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য মুবিনা বেগম বলেন, বন রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে এসব অপকর্ম করে বেড়ায় তাহলে আমরা জনপ্রতিনিধিরা যাব কোথায়। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখন সে আমার বিরুদ্ধেই লেগে যায়।
তিনি বলেন, বন কর্মকর্তা শাফিউলকে আমি বলেছি- আমার এলাকায় জনগণকে এভাবে হয়রানি করছেন কেন? তখন তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি।
প্রশ্ন তুলে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, যাদের খতিয়ানভুক্ত জমি আছে তাদের ওপর পর্যন্ত এই বন কর্মকর্তা নির্যাতন করেন, গাছপালা কেটে দেয়। এতো সাহস তিনি কীভাবে পান? ওসি প্রদীপের চেয়েও ভয়ঙ্কর এই বন কর্মকর্তা। তার আমলে বন বিভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আগে এরকম ছিল না।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, বনভূমি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো উদাসীন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বনভূমির সঠিক তথ্য নিয়েও চলছে লুকোচুরি। সে সঙ্গে দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারেও কোনো মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। ফলে কমছে বনভূমি, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।
কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম নিউজবাংলাকে বলেন, শুধু টেকনাফ নয়, কক্সবাজার জেলা জুড়ে বন বিভাগের জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। অথচ সরকারি হিসাবে দখল হয়েছে মাত্র ৮৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে, দখল হচ্ছে; অথচ কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
টেকনাফ বাহারছড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইলিয়াস জানান, কক্সবাজার জেলার মধ্যে বাহারছড়া একটি পর্যটন কেন্দ্র। চারদিকে পাহাড় এবং বনভূমি। সেই প্রাকৃতিক সম্পদে দখলদারদের থাবা পড়েছে।
এক কথায় বলতে গেলে শীলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলামের নেতৃত্বে গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে বৃহৎ এই বনভূমি। নানাভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে বন। এক সচিব তার আত্মীয়- এমনটা প্রচার করে এই বন কর্মকর্তা সবাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছে অবৈধভাবে।
এ বিষয়ে টেকনাফ শীলখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলামকে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয়ে দিলে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে ফোন দিলেও আর যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সরোয়ার আলম নিউজবাংলাকে বলেন, তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। বেদখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার করে আবার সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হবে।


http://dlvr.it/TCw0fV

Post a Comment

0 Comments